দামি গাড়ি আর ফাইভ স্টার হোটেলে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের টাকা

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক :

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও সরকারের নির্মম নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসছে কোটি কোটি টাকার অর্থ সহায়তা। তবে সেই অর্থের পুরোটা খরচ করা হচ্ছে না রোহিঙ্গাদের মুখে হাসি ফোটাতে। বরং বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের দামি গাড়ি, উচ্চবেতন ও ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ আলিশান জীবনযাপনে ব্যয় করা হচ্ছে।

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে কক্সবাজার ‘সিএসও-এনজিও’ ফোরাম (সিসিএনএফ)।

সিসিএনএফ কো-চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা লিখিত বক্তব্যে বলেন, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোট ১২৩টি দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে ২১টি এবং কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও রয়েছে পাঁচটি। অন্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাজ করছে। এনজিওগুলো বিভিন্নভাবে অর্থ আনে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য। এসব অর্থের একটি অংশ আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত কর্মকর্তারা বিলাসিতায় ব্যয় করা হচ্ছে।

আবু মোরশেদ চৌধুরী আরও বলেন, গত ২০১৭ সালে যৌথ সাড়া পরিকল্পনা (জেআরপি) অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট মেটাতে বাংলাদেশে মোট ৪৩৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রয়োজন ছিল। এই পরিকল্পনার মোট ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জেআরপি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। যা ২০১৭ সালে প্রাপ্ত মোট তহবিলের ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মোট ৪৯৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাংলাদেশে আনা হয়েছিল।

একইভাবে যৌথ জেআরপি ২০১৮ সালের বিপরীতে বাংলাদেশে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৯৫০ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যার বিপরীতে জেআরপি পরিকল্পনার মাধ্যমে মোট ৬৫৫ মিলিয়ন (৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ) মার্কিন ডলার অর্থ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আসে। অন্যদিকে এই পরিকল্পনার বাইর থেকে এসেছে মোট ৭২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি ২০১৯ সালে জেআরপির আওতায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জেআরপির মাধ্যমে অর্জন ৫৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি পরিবারের জন্য এক বছরে ২১৫ মার্কিন ডলার ব্যয় করার জন্য ধরা হয়েছে।

আবু মোরশেদ চৌধুরী আশঙ্কা করে বলেন, “হিসাব অনুযায়ী সব অর্থ এই পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয়নি। আমরা অসংখ্যবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। আমাদের দাবি হচ্ছে, সরকার এসব এনজিওদের নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যানবাহন ব্যয় কমাতে হবে এবং বিদেশি এনজিওদের আলিশান জীবনযাপনের প্রতি বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরিতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ স্থানীয় রাখতে হবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আগামীতে রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কক্সবাজারে।’

সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার ‘সিএসও-এনজিও’ ফোরাম (সিসিএনএফ) এর কো-চেয়ারম্যান ও কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম ও মুক্তি কক্সবাজার সমন্বয়ক অশোক কুমার সরকারসহ ওই ফোরামের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।